বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
শাকিব বিপ্লব॥ বরিশাল শিল্প নগরীর উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদার দাবিতে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের একাংশের অব্যাহত সন্ত্রাস এবং সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনায় নিয়েছে।
সেখানকার সর্বশেষ পরিবেশ ও যে কোনো সময় নাশকতার আশঙ্কা আমলে নিয়ে গোটা শিল্প এলাকার চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশপ্রধান বেনজির আহম্মেদ নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের আবেদন ছিল, স্থায়ীভাবে শিল্প পুলিশের একটি ইউনিট স্থাপন। কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্তের আলোকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশকে এ সংক্রান্তে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে তা বাস্তবায়নে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠি প্রাপ্তির কথা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিসিক ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ও ফরচুন সু-কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী মিজানুর রহমান স্বীকার করেছেন, আইজিপির নির্দেশনাবলী সংক্রান্ত এআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা মো. আয়ুব হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠির অনুলিপি তার বরাবর এসেছে। অবশ্য ইতিমধ্যে বিসিকে অতিরিক্ত অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
একাধিক সূত্র জানায়, ২০ জানুয়ারি স্থানীয় এক যুবকের বিসিকের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ এবং নারী উত্ত্যক্ত করায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাকে আটক করে সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠনের ব্যানারে ওই যুবকের পক্ষালম্বন করে মুক্তির দাবিতে বরিশাল অচল কর্মসূচির ডাক দেয়। এবং থানা ঘেরাও করে।
একপর্যায়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে উপস্থাপন দুটি দাবির একটি যুবককে মুক্তি এবং শিল্প উদ্যোক্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বাধ্য হয়।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছিল, আটক সোহাগ তাদের অনুসারী এবং শ্রমিক সংগঠনের সদস্য। ওই দিনের ঘটনায় গোটা বরিশালে অচলাবস্থার বাস্তব চিত্রপট বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশ পায়। সেই সূত্রে এ ঘটনা পুলিশের উচ্চমহল অবগত হয়।
পাশাপাশি বিসিক ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মিজানুর রহমান পুলিশের আইজিপির সাথে সাক্ষাৎ করে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিসিকের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব অনুধাবনে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিতভাবে অনুরোধ রাখেন। রাজধানী ঢাকার অন্তত ১০ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এসময় মিজানুর রহমানের সাথে উপস্থিত থাকেন এবং বরিশাল বিসিকে বিশৃঙ্খলা এড়াতে শিল্প পুলিশের ইউনিট গঠনে আবেদন রাখা হয়।
ব্যবসায়ী ও পুলিশপ্রধানের মধ্যেকার অনির্ধারিত এই বৈঠকে উঠে আসে বিসিকে ক্ষমতাসীন দলের আগ্রাসনের নেপথ্যে ৭২ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে সংঘাতের সূত্রপাত। সর্বশেষ আক্রশমূলক যে কোনো সময় নাশকতামূলক ঘটনার সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিও অবহিত করা হয়।
এ অবস্থায় সেখানকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অচলাবস্থা ও ভীতিকর পরিবেশ থেকে উত্তরণে আকুতি জানান। আইজিপি বেনজির আহম্মেদ সার্বিক ঘটনাবলী অবহিতপূর্বক ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং শিল্প নগরীর উন্নয়ন তাগিদে নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিল্প উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু শিল্প ইউনিট গঠনে উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময়ের দীর্ঘয়তার কথা জানিয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণে সিদ্ধান্ত নেন। এরই প্রেক্ষাপটে বরিশাল বিসিকে আপাতত ২৪ ঘণ্টা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশনা আসল।
গত ২৫ জানুয়ারি আইজিপির এই নির্দেশনাবলী কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা বিভাগের উচ্চপর্যায়ের অন্তত সাতটি শাখায় পুলিশ সদর দপ্তরের প্রেরিত চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়। পাশাপাশি বরিশাল বিসিক ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরাবরেও অনুরুপ একটি অনুলিপি আসে।
উল্লেখ্য, বরিশাল বিসিকে উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আগে থেকেই স্বল্পসংখ্যক পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টিম সেখানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। তদুপরি ছাত্রলীগ নামধারী যুককেরা যখন-তখন সেখানে অনুপ্রবেশ এবং বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চালায়। গত সপ্তাহে বিসিক উন্নয়নকল্পে সরেজমিন ঘুরে দেখতে এবং ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় বৈঠকে অংশ নেন নবাগত জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।
তার উপস্থিতিকালে ক্ষমতাসীন দলের এই অংশটি আবারও সেখানে মারমুখি অবস্থান নেয়। যদিও সেদিন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, তবে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিকালে এই ধরনের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছে না। আবার রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের কাছে দৌরাত্ম্যের কাছে বরিশাল নগর পুলিশের অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। যার ফলশ্রুতিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ পুলিশপ্রধানের স্মরণাপণ্ন হতে বাধ্য হন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে বিসিকে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও সদর দপ্তর থেকে নতুন যে নির্দেশ এসেছে তা বাস্তবায়নে স্থায়ীভাবে সেখানে পুলিশী ক্যাম্প বসানো হবে কী না তা নির্ভর করছে কমিশনারের পরিকল্পনার ওপর। কিন্তু এই সংক্রান্তে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খানের সাথে পক্ষ থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কোন সাড়া দেননি।
Leave a Reply